বিএনপির পুনর্গঠন : কিছু অপ্রিয় কথা
- ড. আবদুল লতিফ মাসুম
- ২৯ জানুয়ারি ২০১৯, ১২:২২
রাজনৈতিক দলের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনায় গণতন্ত্রের চর্চা একটি অপরিহার্য বিষয়। দলের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য নির্ধারণ তথা সিদ্ধান্ত গ্রহণপ্রক্রিয়া এবং দৈনন্দিন কার্যক্রম পরিচালনায় যদি নেতাকর্মীদের স্বাভাবিক ও ব্যাপক ভূমিকা না থাকে, তাহলে সে দল জনপ্রিয়তা ও গতিশীলতা অর্জন করতে পারে না। সে জন্য রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা সব সময়ই দলের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম পরিচালনায় কর্মীসাধারণের অংশগ্রহণ এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক আচরণের ওপর জোর দিয়ে আসছেন। এ বিষয়ে অবশ্য ‘নানা মুনির নানা মত’ রয়েছে। একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী তিনটি বিষয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করছেন- প্রথমত, নেতা নির্বাচন; দ্বিতীয়ত, নির্বাচনী প্রার্থী নির্ধারণ; তৃতীয়ত, দলের নীতিনির্ধারণ (স্ক্যারো: ২০০৫)। দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের নমুনা বোঝার জন্য আমরা আরো কিছু বিষয় যোগ করতে পারি।
যেমন : দলীয় নেতৃত্বের বিভিন্নপর্যায়ে সামাজিক বৈচিত্র্যের প্রতিফলন। আরো আছে দল ও নির্বাচনে সংগৃহীত তহবিলের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি। অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, শান্তিপূর্ণ উপায়ে দলীয় কোন্দল ও ব্যক্তিগত সঙ্ঘাত নিরসন। সব কিছু বিচার বিশ্লেষণ করে রাজনৈতিক দলে অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের নিয়ামক হিসেবে ছয়টি বিষয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা একমত। এগুলো হচ্ছে- ১. অভ্যন্তরীণ পদ ও পদবি নির্ধারণের প্রক্রিয়া, ২. তৃণমূল থেকে জাতীয় সংসদ পর্যন্ত প্রার্থী নির্ধারণ, ৩. লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও নীতি গ্রহণ, ৪. নেতৃত্ব নির্ধারণে বিবিধ বিষয়- মেধা-মনন, পেশা, অঞ্চল ইত্যাদি বিষয়ে বহুমুখী অবস্থান নির্দিষ্টকরণ, ৫. নির্বাচনী তহবিল পরিচালনা, এবং ৬. নিজ দলে এবং অপর দলের সাথে বিরোধ মীমাংসার প্রকৃতি নির্ধারণ। রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এসব ব্যাকরণিক দৃষ্টিভঙ্গিতে যদি বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের ব্যাপারে বিশ্লেষণ করা হয় তাহলে আমাদের হতাশ হতে হবে। ২০০৮ সালে অরাজনীতিকেরা আমাদের রাজনীতিতে শৃঙ্খলা বিধানের জন্য কিছু বিধিবিধান আরোপ করেছিলেন। যেহেতু তারা রাজনীতির ময়দানে কিছুটা রেফারির ভূমিকা পালন করতে চেয়েছিলেন- এগুলো ছিল মন্দের ভালো। কিন্তু ২০০৯ সালে যাদের তারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করে যান, তারা নিজেদের সুবিধা মতো সবকিছু ‘ওলট-পালট করে লুটেপুটে খেলেন’।
বাংলাদেশের সীমিত রাজনৈতিক সংস্কৃতির প্রেক্ষাপটে দলগুলোর অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থাপনা বিবেচনা করতে হবে। অন্যসব রাজনৈতিক দলের মতো সীমাবদ্ধতা ও সঙ্কীর্ণতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি এর অভ্যন্তরীণ রাজনীতি পরিচালিত হচ্ছিল। ২০০৯ সালে যে সরকার ‘প্যাকেজ ডিল’-এর আওতায় বাংলাদেশে ক্ষমতায় প্রতিষ্ঠিত হলো, তাদের প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়ায় বিরোধীদের নির্মূল করা। এ লক্ষ্যে তারা তাদের রাজনীতির একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব এবং এর নেতাকর্মীদের হত্যা, গুম, খুন ও নিপীড়ন-নির্যাতনের মাধ্যমে এতটাই ভীতির মধ্যে রাখে যে, তাদের পক্ষে স্বাভাবিক রাজনৈতিক আচরণ ও কার্যক্রম সম্ভব হয়ে ওঠেনি। এবার ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর রাষ্ট্রযন্ত্রকে সর্বতোভাবে ব্যবহার করে যে একতরফা নির্বাচন তারা ‘উপহার’ দেয়, তা বিরোধী শক্তি তথা বিএনপির জন্য আরেকটি বড় ধরনের সর্বনাশ বয়ে এনেছে। নির্বাচনের আগে গোটা দেশকে যেমন তারা একটি জেলখানায় পরিণত করেছিল, তেমনি নির্বাচনের পরে সারা দেশে তাদের তাণ্ডব অব্যাহত রয়েছে।
বিএনপির নেতৃত্ব ধৈর্য ও সহনশীলতার সাথে পরিস্থিতি মোকাবেলা করেছে। যথার্থভাবে বিএনপির নেতৃত্ব ‘ধীরে চল’ নীতি গ্রহণ করে। তা না করলে ফ্যাসিবাদী শক্তি আরো হিংস্রতায় দলটির অবশিষ্ট জনশক্তির ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ত। নির্বাচনে এতকিছুর পরেও বিজয়ীদের তরফ থেকে কোনো সৌজন্য বা শুভেচ্ছার নিদর্শনস্বরূপ হামলা-মামলা বন্ধ কিংবা স্বাভাবিক পরিবেশের স্বার্থে কোনো বাক্য বা আদেশ এখনো উচ্চারিত হয়নি। তার অর্থ, তারা আগের খড়গহস্ত নীতির ওপরই বলবৎ আছে। সামনের দিনগুলোতে তাদের আরো কুৎসিত চেহারা দেখাতে পারে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করে। এটা অপ্রিয় বাস্তব সত্য যে, সরকারবিরোধীরা বাংলাদেশেরই নাগরিক। তারা এ দেশ থেকে লুটেরাদের মতো পালিয়ে যেতে চায় না। ১/১১-এর সময় এক নেত্রী যখন বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন তখন জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতীক বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন, ‘এ দেশ ব্যতীত আমার অন্য কোনো ঠিকানা নেই। সুতরাং দেশ ছেড়ে অন্য কোথাও যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।’ তিনি এখন কারার অন্তরালে থেকে তার দেশপ্রেম ও আপসহীনতার প্রমাণ দিচ্ছেন।
অতীতের ভুলত্রুটি সংশোধন করে বিএনপি তথা সমগ্র জাতীয়তাবাদী শক্তিকে ঘুরে দাঁড়াতে হবে। এজন্য চাই শক্তি, সাহস ও দৃঢ়তা। আর সংগঠনের মধ্য দিয়েই এ শক্তি অর্জন করা সম্ভব। তাই, বিগত এক দশকের অন্যায়-অত্যাচারে দীর্ণ-বিদীর্ণ বিএনপিকে নতুন করে সংগঠিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন শীর্ষ নেতৃবৃন্দ। অতীতে প্রথমত কথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আগ্রাসী নীতি এবং পরবর্তী সময়ে ক্ষমতাসীনদের নিরন্তর নিপীড়ন নীতির কারণে দলীয় গঠনতন্ত্র মোতাবেক নির্ধারিত সময় অন্তরে গ্রাম থেকে রাজধানী পর্যন্ত কোনো ক্ষেত্রেই যথাসময়ে যথানিয়মে দলীয় কমিটি গঠন সম্ভব হয়নি। দলের অভ্যন্তরের সুবিধাবাদী অংশ এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে নেতৃত্বের লোভ-মোহ যে এ ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধক ছিল তা অস্বীকার করা যাবে না।
বিএনপির গঠনতন্ত্র মোতাবেক চেয়ারপারসন, মহাসচিব, জাতীয় নির্বাহী পরিষদ এবং জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্যরা- সবাই নির্বাচনের মাধ্যমে দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার কথা। শুধু চেয়ারপারসনের উপদেষ্টারা মনোনীত হওয়ার কথা রয়েছে। আর পার্লামেন্টারি বোর্ড গঠিত হবে স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সংশ্লিষ্ট জেলাপর্যায়ের নেতৃত্বের সমন্বয়ে। ১৯৭৮ থেকে ২০১৮ এই দীর্ঘ সময়ে সম্মোহনী রাজনীতির বাস্তবতার কারণে অনেক কিছু হয়েছে। এখন সময় এসেছে পার্টির সব স্তরে- তৃণমূল পর্যায় থেকে স্থায়ী কমিটি- সর্বত্র গণতন্ত্রের নিয়মিত অনুশীলন। যেহেতু শীর্ষ নেতৃত্বের অনুপস্থিতি বিদ্যমান- সংগঠিত সম্মিলিত গণতান্ত্রিক শক্তি এর বিকল্প হিসেবে মানুষকে উৎসাহ উদ্দীপনা জোগাবে। পরিতৃপ্তির বিষয় এই যে, দুঃসহ বিপদের বিগত বছরগুলোতে বিএনপির নেতৃত্ব এক ও অভিন্ন ছিল। ক্ষমতাসীন দল নানাভাবে এ দলকে কখনো ভীতি কখনো লোভ দেখিয়ে বিভক্ত করতে চেয়েছে; কিন্তু তাদের ইস্পাত কঠিন ঐক্য এবং সম্মিলিত নেতৃত্ব নাগরিক নাগরিকদের মুগ্ধ করেছে।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, জাতীয় সংসদের নির্বাচনী বিপর্যয়ের পর দল গোছানোর কাজে মনোযোগ দিতে চাচ্ছে বিএনপি। দলের শীর্ষ নেতারা ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, অতীতে যা-ই হোক না কেন, এবার ভোটের মাধ্যমে প্রতিটি পর্যায়ের নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে। এই নীতিগত অবস্থানে নেতারা দৃঢ় থাকতে পারলে সংগঠন মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করানো সম্ভব।
এ সূত্র থেকে আরো জানা গেছে, বিগত রাজনৈতিক ও নির্বাচনী কর্মসূচিতে যেসব ব্যক্তি শাখা সংগঠন ও অঙ্গসংগঠন ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে নেতৃত্বের পরিবর্তন আনা হবে। ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনী বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার জন্য বিএনপির শীর্ষ মহলে নানামুখী কর্মসূচির কথা চিন্তা করা হচ্ছে। খবরে আরো জানা গেছে, দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলকে সুসংগঠিত করে এগিয়ে যাওয়ার বিষয়ে নির্দেশনা দিয়েছেন। ইতঃমধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটি ভবিষ্যৎ করণীয় সম্পর্কে দীর্ঘ বৈঠক করেছে। প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসেবে, তারা নেতাকর্মীদের মামলা ও গ্রেফতার থেকে মুক্ত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। এ জন্য একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। ধানের শীষের প্রার্থীদের নিজ নিজ আসনে নেতাকর্মীদের সার্বিক খতিয়ান সংগ্রহ করে কেন্দ্রে জমা দিতে বলা হয়েছে।
একই সাথে মামলা পরিচালনা ও জামিনের ব্যবস্থা করার জন্য আর্থিক ও আইনগত সহায়তা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই রাজনৈতিক বাস্তবতা অস্বীকার করে লাভ নেই যে, সাংগঠনিকভাবে বিএনপির বহু দুর্বলতা রয়েছে। ইতঃপূর্বে সরকারের ধরপাকড়, জেল-জুলুম ইত্যাদি কারণে বিভিন্ন পর্যায়ে কমিটি গঠন করা সম্ভব হয়নি। ক্ষমতার লড়াইয়ে বিএনপি শীর্ষ দল হওয়ার কারণে অনেক ক্ষমতালোভী, সুবিধাবাদী এবং সুযোগসন্ধানী বিএনপিতে নাম লিখিয়েছে। ১৯৯১ সালের পর বাংলাদেশে দ্বিদলীয় ব্যবস্থা আংশিকভাবে ফলপ্রসূ হওয়ার কারণে রাজনৈতিক সুবিধাবাদীরা একবার ‘এ’ দল ও পরে ‘বি’ দল করে ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখার চেষ্টা করছিল। বিএনপি যখন ২০১৪ সালে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়নি, তখন এদের একটি অংশ হতাশ হয়ে পড়ে। ওরা ভবিষ্যতের আশায় ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও কেন্দ্রীয় পর্যায়ের পদগুলো দখল করার চেষ্টা করেছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা সফলও হয়। এমনও বদনাম শোনা যায় যে, কোনো কোনো পর্যায়ে পদ ‘কেনাবেচা’ হয়েছে। দল ক্ষমতায় না থাকার প্রেক্ষাপটে নেতারা আন্দোলনের উপযোগী নেতৃত্ব বেছে নিয়েছেন।
কিন্তু পরবর্তীকালে বিএনপি ক্ষমতা তো দূরের কথা, অস্তিত্বের সংগ্রামে লিপ্ত হলে এসব লোক নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। পদগুলো খালি না হওয়ায় বিএনপি নেতৃত্ব উদ্যোগী এবং ত্যাগী নতুন নেতাকর্মীদের এসব পদে আনতে ব্যর্থ হয়। অনেক জায়গায় এমনকি ইউনিয়ন ও উপজেলা পর্যায়ের কোন্দল এতটাই তীব্র হয় যে, দু-তিনটি কমিটির অস্তিত্ব লক্ষ করা যায় একই স্থানে। কোন্দলপ্রিয় এসব স্থানীয় নেতা প্রায়ই বড় বড় নেতাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় লাভ করে। সারা দেশে এক রকম স্থবিরতা বিরাজ করে। ফলে আন্দোলন এবং নির্বাচনে তাদের তৎপরতা সীমিত হয়ে পড়ে। এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে প্রার্থীর ‘দৈর্ঘ্য-প্রস্থ’ এবং টাকার জোর না দেখে তার অতীতের কর্মতৎপরতা, ত্যাগ ও নিষ্ঠার মূল্যায়ন করতে হবে। এসব পরিমাপের একমাত্র মাধ্যম হলো, ভোট। একটি নির্দিষ্ট ইউনিটে বর্তমান সদস্যদের প্রত্যক্ষ ভোটে পদাধিকারী নির্বাচিত হলে তা সংগঠনকে প্রাণ দেবে। হেরে যাওয়া অংশ যদি বড় নেতাদের আশকারা না পায়, তাহলে তারাও একসময় নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে। এভাবে নির্বাচনের মাধ্যমে সাংগঠনিক তৎপরতা অবিলম্বে শুরু করতে হবে।
ইতঃপূর্বে স্থির হয়েছিল, একজন ব্যক্তি শুধু একটি পদেই থাকতে পারবেন; কিন্তু বাস্তবে এর ব্যত্যয় ঘটেছে। কর্মীরা অভিযোগ করছেন, বড় নেতাদের কারণেই এটা হয়েছে। এবার কঠিন ও কঠোরভাবে গণতান্ত্রিক নীতিমালার প্রয়োগ ঘটাতে হবে। ছাত্রদের কমিটির ব্যাপারে বাস্তব পরামর্শ- এই ‘চাচা খালু’দের মনোনয়ন না দিয়ে যাদের ছাত্রত্ব বর্তমান রয়েছে, তাদেরই মনোনয়ন দিতে হবে। নির্বাচনের আগে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কমিটি হওয়া জরুরি ছিল। যুবদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কাজ ঝুলে আছে দীর্ঘ দিন ধরে। স্বেচ্ছাসেবক দলেরও একই অবস্থা। কৃষক ও শ্রমিক দলের অবস্থাও একই রকম। এ ক্ষেত্রে সততা, সাহস ও যোগ্যতাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। ‘বটম টপ’ অ্যাপ্রোচ প্রয়োগ করে তৃণমূল থেকে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে আরোহণ ঘটতে হবে। ওপর থেকে নেতা-নেত্রী ‘নাজেল’ করা যাবে না। যদি এসব কার্যক্রম পরিচালনা করতে সময় লাগে, সে সময় দিতে হবে।
সেইসাথে অন্যায় ও অসঙ্গত নির্বাচনের মধ্যে আন্দোলন অব্যাহত রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে তিনটি পর্যায়ে- আইন, সংলাপ ও আন্দোলন- সমভাবে চলতে পারে। বিএনপি মহাসচিব যথার্থই বলেছেন, সংলাপ হলে তা কেবল নতুন নির্বাচনের প্রশ্নেই হতে পারে। নির্বাচনপূর্ব সংলাপ গণতান্ত্রিক আন্দোলনে কোনো অবদান রাখেনি। বরং শাসক দলের প্রতারণা-কৌশল তাদের নিজেদের কাজে লেগেছে। অতীত নিয়ে বিবাদ বা বিতর্কে সময় নষ্ট করা যাবে না। বিএনপিকে তার স্বকীয় সত্তায় স্ব-শক্তিতে বলীয়ান হতে হবে। সবাই জানে, দেশের কোটি কোটি সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ নীরবে নিভৃতে বিএনপির সাথে রয়েছে। এই নীরব জনগোষ্ঠীকে কর্মসূচির মাধ্যমে বিএনপির সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে একীভূত করতে হবে। জনগণের দুঃখ দুর্দশা ও ক্ষোভকে আন্দোলনের মাধ্যমে প্রকাশ ঘটাতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি পথ পরিক্রমার কর্মসূচি প্রণয়ন করে প্রত্যাশিত গণ-আন্দোলন তথা গণবিস্ফোরণ ঘটাতে হবে। জনগণই যদি ক্ষমতার উৎস হয়, তাহলে আজ হোক কাল হোক এর প্রতিফলন ঘটবেই। টি এইচ গ্রিন বলেন, ‘ডেমোক্র্যাসি মে বি ডিফিটেড ইন মেনি ব্যাটলস, বাট ইট উইনস দি লাস্ট।’
লেখক : অধ্যাপক, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
Mal55ju@yahoo.com